কোডেক এনজিও লোন পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চান?  তাহলে সঠিক আর্টিকেলে আপনি এসেছেন। কারন আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আজ আমরা আপনাকে “কোডেক এনজিও লোন পদ্ধতি “ সম্পর্কে জানানোর পাশাপাশি বিস্তারিত তথ্য আপনাকে জানাবো। তাহলে দেরি কেন আর্টিকেলটি শুরু করা যাক। 

কোডেক এনজিও লোন কি?

কোডেক এনজিও লোন হলো কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (কোডেক) নামক একটি জাতীয় পর্যায়ের বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার প্রদত্ত আর্থিক সহায়তা কর্মসূচি। এই এনজিও এর লোন প্রধানত দরিদ্র ও নিম্ন-আয়ের জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে ও তাদের সচ্ছলতা বৃদ্ধিতে প্রদান করা হয়। কোডেক এনজিও লোন পদ্ধতি মানুষকে ক্ষুদ্র ব্যবসা শুরু, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও  অন্যান্য প্রয়োজন মেটাতে সহায়তা করে। এই ঋণ প্রক্রিয়া সহজ ও সাশ্রয়ী হওয়ায় বিশেষ করে এই এনজিওর লোন গ্রামীণ ও শহরাঞ্চলের মানুষের কাছে জনপ্রিয়।

কোডেক এনজিও লোন পদ্ধতি বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। বিশেষ করে উপকূলীয় এলাকায়, ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করে। এই সংস্থা মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ) থেকে সনদপ্রাপ্ত এবং শরিয়াহ ভিত্তিক ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমে বিশেষ গুরুত্ব দেয়।

কোডেক এনজিও লোন পদ্ধতি
কোডেক এনজিও লোন পদ্ধতি

কোডেক এনজিও সম্পর্কে

কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (কোডেক) ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত একটি জাতীয় পর্যায়ের বেসরকারী এনজিও। এনজিওটি বাংলাদেশের চট্টগ্রাম, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, নোয়াখালী, পটুয়াখালী, বরিশাল, বাগেরহাট ও খুলনাসহ বিভিন্ন উপকূলীয় জেলায় কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। কোডেক এনজিও লোন পদ্ধতি ছাড়াও শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি এবং দক্ষতা উন্নয়নের মতো বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে। সংস্থাটি ইউনিসেফের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতায় রোহিঙ্গা শরণার্থী শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রমেও অংশ নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। 

কোডেক এনজিও লোন পদ্ধতি গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই এনজিওটি গ্রাহকদের দীর্ঘমেয়াদী ঋণ প্রদানের মাধ্যমে স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে স্বাবলম্বী করে তুলে। 

কোডেক এনজিও থেকে কত টাকা লোন পাওয়া যায়?

কোডেক এনজিও থেকে প্রদত্ত লোনের পরিমাণ সাধারণত আবেদনকারীর প্রয়োজন,যোগ্যতা এবং ঋণের প্রকারের উপর নির্ভর করে। সাধারণত, ক্ষুদ্রঋণ হিসেবে ৫,০০০ টাকা থেকে শুরু করে ৫,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত ঋণ প্রদান করা হয়। তবে, কোডেক এনজিও লোন পদ্ধতি অনুসারে বড় ব্যবসায়িক ঋণের ক্ষেত্রে এই পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে। 

লোনের পরিমাণ নির্ধারণে আবেদনকারীর আর্থিক সক্ষমতা, পূর্বের ঋণ পরিশোধের রেকর্ড ও ব্যবসায়িক পরিকল্পনার মান বিবেচনা করা হয়। আপনি কত টাকা লোন পাবেন এটি জানার জন্য আপনাকে অবশ্যই কোডেক এনজিও এর যে কোন শাখায় যোগাযোগ করতে হবে।

কোডেক এনজিও লোনের প্রকারভেদ

বর্তমান সময়ল কোডেক এনজিও বিভিন্ন ধরনের ঋণ প্রদান করে আবেদনকারীদের। এসকল লোন গ্রাহকদের বিভিন্ন প্রয়োজন মেটাতে সাহায্য করে।  এ সকল লোনের মধ্যে রয়েছে:

  • ক্ষুদ্রঋণ: ক্ষুদ্র ব্যবসা, কৃষি ও গৃহস্থালি প্রয়োজনের জন্য।
  • শিক্ষা ঋণ: শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার খরচ মেটাতে।
  • স্বাস্থ্য ঋণ: চিকিৎসা ব্যয়ের জন্য।
  • ব্যবসায়িক ঋণ: বড় আকারের ব্যবসা শুরু বা সম্প্রসারণের জন্য।
  • জরুরি ঋণ: হঠাৎ আর্থিক প্রয়োজন মেটাতে।

কোডেক এনজিও লোন পদ্ধতি প্রতিটি ঋণের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট শর্ত ও সুদের হার প্রয়োগ করে। যা আবেদনকারীদের জন্য সাশ্রয়ী ও লোন পরিশোধ করতে সাহায্য করে। 

কোডেক এনজিও লোন পদ্ধতি

কোডেক এনজিও লোন পদ্ধতি সহজ এবং স্বচ্ছ। ঋণ পাওয়ার জন্য নিম্নলিখিত ধাপগুলো অনুসরণ করতে হবে:

  1. আবেদনপত্র জমা: আবেদনকারীকে নিকটস্থ কোডেক শাখায় গিয়ে আবেদনপত্র পূরণ করতে হবে।
  2. প্রয়োজনীয় কাগজপত্র: জাতীয় পরিচয়পত্র, ছবি, এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হবে।
  3. যাচাই প্রক্রিয়া: কোডেক কর্তৃপক্ষ আবেদনকারীর তথ্য এবং যোগ্যতা যাচাই করবে।
  4. ঋণ অনুমোদন: যাচাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে ঋণ অনুমোদন করা হয়।
  5. ঋণ বিতরণ: অনুমোদনের পর ঋণের অর্থ আবেদনকারীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বা সরাসরি হাতে প্রদান করা হয়।

কোডেক এনজিও লোন পদ্ধতি দ্রুত ও  কম জটিল হওয়ায় এটি গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কাছে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।

কোডেক এনজিও লোনের যোগ্যতা

অন্যান্য এনজিও এর মতো কোডেক এনজিও থেকে ঋণ পাওয়ার জন্য কিছু নির্দিষ্ট যোগ্যতার প্রয়োজন হয়। এ সকল যোগ্যতার মধ্যে রয়েছে:

  • বয়স: আবেদনকারীর বয়স ১৮ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে হতে হবে।
  • নাগরিকত্ব: বাংলাদেশের স্থায়ী নাগরিক হতে হবে।
  • আয়ের উৎস: স্থিতিশীল আয়ের উৎস বা ব্যবসায়িক পরিকল্পনা থাকতে হবে।
  • পূর্ব ঋণের রেকর্ড: পূর্বের ঋণ পরিশোধের ভালো রেকর্ড থাকলে অগ্রাধিকার পাওয়া যায়।
  • গ্রুপ মেম্বারশিপ: কিছু ক্ষেত্রে ক্ষুদ্রঋণের জন্য গ্রুপ গঠনের প্রয়োজন হতে পারে।

কোডেক এনজিও লোন পদ্ধতি নারীদের জন্য বিশেষ সুবিধা প্রদান করে থাকেন। যাতে নারীরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারে।

কোডেক এনজিও লোনের কাগজপত্র

কোডেক ঋণের জন্য আবেদন করতে নিম্নলিখিত কাগজপত্র প্রয়োজন:

  • জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি।
  • পাসপোর্ট সাইজের ২-৩ কপি ছবি।
  • শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)।
  • ব্যবসায়িক পরিকল্পনা বা আয়ের প্রমাণ।
  • পূর্বের ঋণ পরিশোধের রেকর্ড (যদি থাকে)।
  • গ্রুপ মেম্বারশিপের তথ্য (ক্ষুদ্রঋণের ক্ষেত্রে)।

কোডেক এনজিও লোন পদ্ধতি অনুসারে, সঠিক ও সম্পূর্ণ কাগজপত্র জমা দেওয়া হলে ঋণ প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন হয়।

কোডেক এনজিও লোনের সুদের হার

কোডেক এনজিও লোনের সুদের হার সাধারণত বাজারের তুলনায় সাশ্রয়ী। সাধারণ ক্ষুদ্রঋণের ক্ষেত্রে সুদের হার বার্ষিক ১০% থেকে ১৫% এর মধ্যে থাকে। তবে ঋণের ধরন, পরিমান ও পরিশোধের মেয়াদের উপর নির্ভর করে এই হার কিছুটা পরিবর্তিত হতে পারে। কোডেক এনজিও লোন পদ্ধতি শরিয়াহ ভিত্তিক হওয়ায় সুদের পরিবর্তে প্রায়শই মুনাফা-ভিত্তিক হার প্রয়োগ করা হয়। যা গ্রাহকদের জন্য সুবিধাজনক।

বর্তমানে সঠিক সুদের হার জানতে আবেদনকারীকে  অবশ্যই স্থানীয় কোডেক শাখায় যোগাযোগ করতে হবে।

কোডেক এনজিও লোন পরিশোধ করার নিয়ম

কোডেক এনজিও লোন পরিশোধের নিয়ম সহজ এবং গ্রাহকবান্ধব। সাধারণত, ঋণ পরিশোধের জন্য নিম্নলিখিত পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়:

  • মাসিক কিস্তি: ঋণের পরিমাণ এবং মেয়াদ অনুযায়ী মাসিক কিস্তিতে পরিশোধ করতে হয়।
  • সাপ্তাহিক কিস্তি: ক্ষুদ্রঋণের ক্ষেত্রে সাপ্তাহিক কিস্তির ব্যবস্থা থাকতে পারে।
  • এককালীন পরিশোধ: কিছু ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পুরো ঋণ পরিশোধের সুযোগ রয়েছে।
  • অগ্রিম পরিশোধ: আবেদনকারী চাইলে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ঋণ পরিশোধ করতে পারেন।

কোডেক এনজিও লোন পদ্ধতি পরিশোধের ক্ষেত্রে গ্রাহকদের সুবিধার জন্য নিয়মিত অনুস্মারক ও সহায়তা প্রদান করে।

কোডেক এনজিও লোনের সুবিধা

কোডেক এনজিও লোনের বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে, যা এটিকে জনপ্রিয় করে তুলেছে:

  • সহজ আবেদন প্রক্রিয়া: ঋণের জন্য আবেদন করা সহজ এবং দ্রুত।
  • নমনীয় পরিশোধের সময়: গ্রাহকের সুবিধা অনুযায়ী পরিশোধের সময় নির্ধারণ করা যায়।
  • কম সুদের হার: বাজারের তুলনায় সাশ্রয়ী সুদের হার।
  • নারী ক্ষমতায়ন: নারীদের জন্য বিশেষ ঋণ সুবিধা।
  • উন্নয়নমূলক সহায়তা: ঋণের পাশাপাশি দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ প্রদান।

কোডেক এনজিও লোন পদ্ধতি গ্রামীণ ও নিম্ন-আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য আর্থিক স্বাধীনতা অর্জনের একটি নির্ভরযোগ্য মাধ্যম।

সতর্কতা

কোডেক এনজিও লোন নেওয়ার আগে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত:

  • আর্থিক লেনদেন এড়িয়ে চলুন: কোনো প্রকার অতিরিক্ত ফি বা আর্থিক লেনদেনের প্রস্তাব এড়িয়ে চলুন।
  • সঠিক তথ্য যাচাই: আবেদনের আগে সকল তথ্য এবং বিজ্ঞপ্তি যাচাই করে নিন।
  • পরিশোধের সক্ষমতা: ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা আছে কিনা তা নিশ্চিত করুন।
  • অফিসিয়াল যোগাযোগ: শুধুমাত্র কোডেকের অফিসিয়াল শাখা বা প্রতিনিধির সাথে যোগাযোগ করুন।

কোডেক এনজিও লোন পদ্ধতি সঠিকভাবে অনুসরণ করলে কোনো জটিলতা ছাড়াই ঋণ পাওয়া সম্ভব।

কোডেক এনজিও যোগাযোগ তথ্য

কোডেক এনজিওর সাথে যোগাযোগের জন্য নিম্নলিখিত ঠিকানা এবং তথ্য ব্যবহার করা যেতে পারে:

  • ঠিকানা: কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (কোডেক), প্লট-২, রোড-২, লেক ভ্যালি আ/এ, হাজী জাফর আলী রোড, ফয়েজলেক, চট্টগ্রাম-৪২০২।
  • ইমেইল: info@codecbd.org
  • ফোন: 880-02-334466485
  • ওয়েবসাইট: https://codec.org.bd

কোডেক এনজিও লোন পদ্ধতি সম্পর্কে আরও তথ্যের জন্য নিকটস্থ শাখায় যোগাযোগ করুন।

শেষ কথা

কোডেক এনজিও লোন পদ্ধতি বাংলাদেশের নিম্ন-আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য একটি নির্ভরযোগ্য আর্থিক সমাধান। এই ঋণ সহজ, সাশ্রয়ী এবং নমনীয় হওয়ায় এটি গ্রামীণ ও শহরাঞ্চলের মানুষের কাছে জনপ্রিয়। তবে, ঋণ নেওয়ার আগে সকল শর্ত, সুদের হার এবং পরিশোধের নিয়ম ভালোভাবে বুঝে নেওয়া জরুরি। কোডেক এনজিও লোন পদ্ধতি সঠিকভাবে ব্যবহার করলে এটি আপনার আর্থিক স্বাধীনতা এবং জীবনমান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। প্রত্যাশা করি আর্টিকেল এর মাধ্যমে, আজ আমরা আপনাকে” কোডেক এনজিও লোন “ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানাতে পেরেছি।  যেকোনো প্রশ্ন বা মতামত জানাতে কমেন্ট করে আপনি আমাদের জানাতে পারেন। 

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *